Share This Story !

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (IIUC) এর সাবেক প্রো ভাইস চ্যান্সেলর, সাইন্স ফ্যাকাল্টির বর্তমান ডীন প্রফেসর ড. দেলাওয়ার হোসেন এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দ্বিতীয়বারের মত হল ম্যানেজম্যান্ট কমিটি’র (HMC) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় অনিয়মিত ছাত্র জোরপূর্বক হলে অবস্থান করতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে আবাসিক হলের ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হলের সামগ্রিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনা, অবৈধ ছাত্রদের হল থেকে বের করা সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে পুনঃরায় হল ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
আবাসিক হলের একজন শিক্ষার্থী জানান, হলে গাজা, মাদক সহ নানাপ্রকার অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে অনিবন্ধিত এসব শিক্ষার্থী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবাসিক হলে অবৈধ অবস্থান, হল ডাইনিংয়ে ফাউ খাওয়া, ডাইনিং ম্যানাজারদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক টাকা ছিনতাই, ছাত্রদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, রাজনৈতিক কর্মসূচীতে না যাওয়াতে মারধোর ও মাথা ফাটিয়ে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটছে আবাসিক হলে। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে, হলে অবস্থানরত এসব অবৈধ ছাত্ররা বিভিন্ন সময় শ্রমজীবী এলাকাবাসীর ওপর ধারালো অস্ত্রসস্ত্রসহ আক্রমণ করে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রফেসর ড. দেলাওয়ার হোসাইন সোচ্চার ভুমিকা রাখা শুরু করলে তিনি অবৈধ ছাত্রদের দ্বারা পদে পদে বাঁধার সম্মুখীন হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গতিশীল, সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ প্রফেসরের বাসায় রামজান মাসে হামলা চালায় কিছু ছাত্র। তাদের দাবি, অবৈধভাবে পাস করিয়ে দিতে হবে তাদের কারণ তারা রাজনীতি করে। পড়ালিখার সময় পায় না। ইইই ডিপার্টমেন্ট এর মিফতাউল হাসান আনাস, জুবায়ের ইসলাম ডলার, আব্দুল জাব্বার নাঈম, তানভীর হোসেন প্রমূখ পরীক্ষায় ফেল করলে তারা শক্তি প্রয়োগ করে পাশ করার জন্য ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের রুম ভাংচুর ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। একই দিন সন্ধ্যার পর তারা প্রফেসর ড. দেলাওয়ার হোসেনের বাসায় হামলা চালায়, শিক্ষক ডরমিটরিতে সদলবলে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে জোরপূর্বক তাঁর আবাসস্থলে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। চরম খারাপ ভাষায় গালিগালাজও করে। যার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক একযোগে ক্লাস বর্জন করেন, কর্তৃপক্ষ বরাবর স্বারকলিপি দিয়ে বিচার দাবি করেন কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর প্রক্টর কাউসার আহমদের সাথে এই সন্ত্রাসীদের যোগসাজশের কারণে সেই বিচার আজও হয়নি।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের নাম দিয়ে জামাত-শিবির থেকে আসা কিছু অনুপ্রবেশকারী অবৈধভাবে হলে অবস্থান করে ছাত্রদের নির্যাতন, মোবাইল ছিনতাই, টাকা পয়সা চুরি, স্যারদের হুমকি দেয়া সহ এসব কাজ করে যাচ্ছে।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজনীতির বিরোদ্ধে ষাঁড়াশী অভিযানের ঘোষণা দিলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই হল ম্যানেজমেন্ট কমিটি ২০ অক্টোবর ২০১৯ এর ভিতর অবৈধভাবে আবাসিক হলে অবস্থানরত, নেশাগ্রস্তদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। ঠিক তখনই কোন এক অদৃশ্য নির্দেশনায় ১৮ অক্টোবর ২০১৯ সালে হল ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রফেসর ড. দেলাওয়ার হোসেনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাওসার আহমদের বিরুদ্ধেও, তার আশ্রয় এবং প্রশ্রয় পেয়েই অবৈধরা হলে থাকছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, অবৈধ ছাত্রদের হলে রাখতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অথরিটিকে মিসগাইড করে ইংল্যান্ড থেকে পিএইচডি ডিগ্রীধারী সম্মানিত এ পদার্থবিজ্ঞানীকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, ২০ তারিখ ৫টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ থাকলেও অবৈধ ছাত্ররা এখনো হল ছাড়েনি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতাও লক্ষণীয় নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিবিএ ডিপার্টমেন্টের একজন ছাত্রলীগ নেতার ভাষ্যমতে, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনকে কলংকিত করার অপকৌশল হিসেবে ছাত্রলীগ নামধারী, নেশাগ্রস্তদের শেল্টার দিয়ে আমাদের কোণঠাসা করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাওসার আহমদ ও সহকারী প্রক্টর ইকোনমিকস এর শিক্ষক নেজাম উদ্দিন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ দাবী করলেও এরা আসলে সন্ত্রাসী। ছাত্রলীগের নাম দিয়ে তাদের অপকর্ম জায়েজ করতে চাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ড. দেলাওয়ার তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিলেন। নিয়ম শৃংখলার ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ও শিক্ষকের কাছে তাঁকে সমাদৃত করেছে।
ব্যক্তি জীবনে যাঁর ছেলে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্বনামধন্য অধ্যাপক ও মেয়ে বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত। এমন একজন সফল পিতা, আদর্শ শিক্ষক এবং দক্ষ প্রশাসককে এভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় আবাসিক হলের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা নিয়ে সকলেই আশংকা প্রকাশ করছেন এবং এসব নিয়ে ছাত্রদের মনেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রক্টরকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।।